স্বাধীনতা ও বাধ্যতা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

পঞ্চম অধ্যায়

স্বাধীনতা ও বাধ্যতা

আমরা আগেই জেনেছি যে মানুষ সামাজিক জীব এবং সে একা থাকতে পারে না। সে একটি সমাজের সদস্য এবং সমাজে অন্যদের সাথে পরস্পর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সে জীবনে পরিপূর্ণতা খুঁজে পায় । প্রতিটি সমাজে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা ও বিধিবিধান। অন্যকথায় প্রত্যেকটি মানব-সমাজ গোষ্ঠীকে পরিচালনার জন্য রয়েছে একটি বৈধ কর্তৃপক্ষ । কোন মানব-সমাজ যদি সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য ও সর্বসাধারণের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কাজ ও দেখাশুনা করার জন্য কিছু সংখ্যক লোককে কর্তৃপক্ষ পদে নিযুক্ত না করে তবে সে-সমাজ সু-শৃঙ্খল বা সমৃদ্ধশালী হতে পারে না । পরিপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠতে হলে প্রতিটি মানুষকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি, উন্নতি ও পরিপক্বতা অর্জন করতে হয়। তা সম্ভব হয় কেবলমাত্র এমন একটি সামাজিক পরিবেশে যেখানে নিয়ম-নীতি পালনে বাধ্যতার প্রতি মানুষ বিশ্বস্ত থাকে ।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

• ব্যক্তিগত ও সামাজিক মূল্যবোধ হিসাবে স্বাধীনতা ও বাধ্যতার অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব;

• কর্তৃত্বের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব;

কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্যের (বাধ্যতার) প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে পারব;

বাধ্যতার প্রতি যীশুর মনোভাব বর্ণনা করতে পারব এবং

কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হবো ।

স্বাধীনতা ও বাধ্যতা

মানুষ হলো যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণি । একজন মানুষ অন্যদের সাথে বিশেষভাবে ঈশ্বরের সাথে আধ্যাত্মিক ও যুক্তিসম্পন্ন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে তার ব্যক্তিসত্তা টিকিয়ে রেখে পুরোপুরি ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে । মানুষ একদিকে একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি, অন্যদিকে সে অন্যসব মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একই সাথে সে একজন ‘আমি’ ও ‘আমরা’। একজন ব্যক্তিকে যখন আমরা এই দৃষ্টিতে দেখি ও বুঝতে পারি তখনই আমরা স্বাধীনতা ও বাধ্যতার অর্থ ও এই দুইয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক বুঝতে পারি । আধুনিক যুগে যেখানে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের ওপর জোর দেওয়া হয় সেখানে স্বাধীনতা ও বাধ্যতাকে মোটেই যথাযথ দৃষ্টিতে দেখা হয় না । স্বাধীনতা ও বাধ্যতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । একটিকে ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না । একটিকে ছাড়া অন্যটি বাতিল হয়ে যায়। অন্যকথায় বলা যায়, বাধ্যতাবিহীন স্বাধীনতা মোটেই স্বাধীনতা নয়, অন্যদিকে স্বাধীনতাবিহীন বাধ্যতাও খাঁটি বাধ্যতা নয়। স্বাধীনতা ও বাধ্যতার লক্ষ্য এক এবং তারা চলে সমান্তরালভাবে । ঈশ্বর নিজের উদ্যোগে নিজেরই প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন । মানুষের মধ্যে ব্যক্তি স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে মানুষ যেন তাঁকে জানতে ও ভালোবাসতে পারে সেই ক্ষমতাও তিনি দান করেছেন । যীশু বলেছেন, “পিতা যেমন আমাকে ভালোবেসেছেন,

 

 

আমিও তেমনি তোমাদের ভালোবেসেছি । তোমরা আমার ভালোবাসার মধ্যে থেকো । যদি আমার সমস্ত আদেশ পালন করো, তবেই তোমরা আমার ভালোবাসার আশ্রয়ে থাকবে, আমিও যেমন আমার পিতার সমস্ত আদেশ পালন করেছি আর আছি তাঁর ভালোবাসার আশ্রয়ে” (যোহন ১৫ : ৯-১০)।

যীশুর জীবনে বাধ্যতা ছিল একটি অন্যতম গুণ । কিন্তু অনেকেই বাধ্যতাকে একটি গুণ হিসেবে স্বীকার করতে চায় না । সকল মানুষ যদি তাদের স্বাধীনতাকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করত তাহলে সমাজে দেখা দিত চরম বিশৃঙ্খলা । যেসব কর্তৃপক্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করেন তারা সর্বসাধারণের মঙ্গলকেই প্রাধান্য দেন ও রক্ষা করেন । কর্তৃত্ব বা নেতৃত্বের যথাযথ ব্যবহার আমাদেরকে নিরাপত্তা দেয় এবং আমাদের স্বাধীনতাকে বিকশিত হতে সাহায্য করে ।

জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট । কিন্তু এ মহান ব্যক্তি পিতামাতার বড় বাধ্য ছিলেন । মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে তিনি আটলান্টিক সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তাঁর ভাইয়ের মতো এ্যাপলবি স্কুলে শিক্ষা গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। বাড়ি ছাড়ার পূর্বে তিনি তাঁর সমস্ত ব্যক্তিগত মালামাল জাহাজে তোলার জন্য তাঁর লোকদেরও নির্দেশ দেন । আর তাঁর নির্দেশ মতো তাঁর সমস্ত মালামাল জাহাজে তোলা হয় । এবার বিদায় নেবার জন্য তিনি তাঁর মায়ের সাথে দেখা করতে গেলেন । মা তাঁর এই ১৫ বছর বয়সের ছেলেকে কঠোর পরিশ্রমের মাঝে শিক্ষালাভের ব্যাপারে তেমন উৎসাহী ছিলেন না। তিনি তাঁর ছেলের গৃহত্যাগের প্রাক্কালে অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে ছেলের সামনে এসে দাঁড়ান । এত ছোট ছেলের বিক্ষুব্ধ আটলান্টিক সমুদ্র পাড়ি দেবার ব্যাপারে তিনি মোটেও আগ্রহী ছিলেন না । তবুও তিনি তাঁর ছেলের যাবার বেলায় তাঁকে কোনো বাধা দিতে চাইলেন না । বিদায় বেলায় মা-ছেলে যখন মুখোমুখি তখনই ছেলে ওয়াশিংটন তাঁর মায়ের চোখে জল দেখে তাঁর শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে সমুদ্র পাড়ি দেবার অভিপ্রায় ত্যাগ করে বলেছিলেন, “আমি সমুদ্রে গিয়ে আমার মায়ের হৃদয় বিদীর্ণ করতে চাই না ।” মা তাঁর এই কথা শুনে এতই আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে অত্যন্ত স্নেহ ভরে বলেছিলেন, “বাবা, আমি তোমাকে আশীর্বাদ করি, তুমি একদিন খুব বড় মানুষ হও ।” আর ঠিকই জর্জ ওয়াশিংটন তাঁর ব্যক্তিগত শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষালাভ করে এক সময়ে এক বিরল সম্মানজনক ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়েছিলেন। মায়ের প্রতি জর্জ ওয়াশিংটনের এই বাধ্যতা ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা । আমরা জানি, আমেরিকার ইতিহাসে জর্জ ওয়াশিংটনের মতো আর দ্বিতীয় কোন প্রেসিডেন্টের আবির্ভাব ঘটেনি । আর তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি মরণোত্তর “জেনারেল অব দি আর্মিজ অব দি ইউ.এস.এ” আমেরিকার সর্বোচ্চ সামরিক খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন (৪ জুলাই, ১৯৭৬)।

কৰ্তৃত্ব

কোনো দল বা গোষ্ঠী, সমাজ বা প্রতিষ্ঠান, দেশ বা জাতিকে পরিচালনা দানের জন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে যে আইনগত ক্ষমতা বা শক্তি দেওয়া হয় তাকেই বলে কর্তৃত্ব । এই ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয় যেন তারা তাদের অধীনস্থদেরকে সঠিক পরিচালনা দিতে পারেন, তাদের অধিকার আদায়ে নিশ্চয়তা দান করতে পারেন, নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং উন্নতি সাধনের জন্য কাজ করতে পারেন । ভালোভাবে শাসন

 

 

করার অর্থ অধিকারের নিশ্চয়তা দান এবং দায়িত্ব পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা নয়, বরং সকলের মধ্যে সঠিক সম্পর্ক, ন্যায্যতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার স্বাভাবিক সদিচ্ছা নেতৃবর্গের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয় । একটি মানব দেহ যেমন মস্তক দ্বারা পরিচালিত হয়, তেমনি একটি পরিবার, সামাজিক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং একটি রাষ্ট্রও তার নেতৃবর্গ দ্বারা পরিচালিত হয় । মস্তক ব্যতীত যেমন দেহ কিছুই করতে পারে না, দেহের প্রতিটি অঙ্গ যেমন মস্তকের নির্দেশনায় চলে তেমনি কোনো পরিবার বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ও পরিচালক ছাড়া কার্যকর হতে পারে না। একটি পরিবারে পিতা বা কোনো কোনো পরিবারে পিতার অবর্তমানে মাতা পরিবার পরিচালনা করেন। একটি সমাজে সমাজ নেতা, একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেমন ধর্মপল্লীতে পাল-পুরোহিত, একটি দেশে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি, এবং আমাদের খ্রিষ্টমণ্ডলীতে পোপ, বিশপ, পুরোহিত ও নির্বাচিত নেতৃবর্গ ও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের সাথে পরিচালনার কাজে আরও সভাসদ বা মন্ত্রিপরিষদ সহযোগিতা করেন ।

যে দল, গোষ্ঠী, দেশ বা জাতিকে পরিচালনার দায়িত্ব নেতৃবর্গকে দেওয়া হয় তারা তাদের নেতৃবর্গের পরিচালনা ও নির্দেশনা অনুসারে চলে এবং তাদের বাধ্য থাকে । অর্থাৎ পরিবার, সমাজ ও দেশের সদস্য হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তি সেই পরিবার, দেশ ও সমাজের নিয়ম-নীতি, বিধিবিধান মেনে চলে যেন কাঙ্ক্ষিত শান্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধি লাভ সম্ভব হয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে, এমনকি আমাদের দেশের দিকে তাকালে আজকাল আমরা কী দেখি? কেন এত অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা, ধর্মঘট ও হরতাল ? কোনো কোনো সময় এগুলো হয় ন্যায্য অধিকার আদায়ের কারণে। কিন্তু কোনো কোনো সময় এগুলোর যথাযথ কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না । কিছু কিছু ব্যক্তি নেতৃবর্গের পরিচালনা মানতে চায় না, বাধ্যতাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখে অথবা স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করে ।

পবিত্র মঙ্গলসমাচারে আমরা দেখতে পাই যীশু কর্তৃত্বকে অপব্যবহার ও সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করে সেবা হিসেবে শিক্ষা দিয়েছেন । এই অর্থে কর্তৃত্ব হলো জীবন দানের ক্ষমতা এবং এই ক্ষমতা ব্যক্তিকে তার ব্যক্তিসত্তায় বেড়ে উঠতে সাহায্য করে । আমরা পবিত্র বাইবেলের দুইটি উদাহরণ দেখি:

“সেই সময় শিষ্যদের মধ্যে এই নিয়ে তর্ক উঠল যে, তাঁদের মধ্যে কে সবচেয়ে বড় বলে গণ্য হবার যোগ্য । যীশু তাঁদের বললেন: “বিজাতীয়দের রাজারা নিজেদের প্রজাদের ওপর প্রভুত্ব চালায়; তাদের যত অধিপতিরা ‘গণমঙ্গল-বিধায়ক' নামেই নিজেদের অভিহিত করায় । তোমাদের কিন্তু ওইভাবে চলা উচিত নয় । তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড়, তাকে বরং চলতে হবে কনিষ্ঠেরই মতো; আর যে তোমাদের প্রধান, তাকে চলতে হবে সেবকেরই মতো” (লুক ২২ঃ২৪-২৬)।

মার্ক লিখিত মঙ্গলসমাচারের ১০ঃ ৩৫-৪৫ পদে আমরা দেখতে পাই: “জেবেদের সেই দুই ছেলে, যাকোব আর যোহন, এক সময়ে যীশুর কাছে এসে বললেন: গুরু, আমরা চাই যে, আপনি আমাদের একটা অনুরোধ রাখুন ।” যীশু তাঁদের বললেন: “তোমরা কী চাও? বল তোমাদের জন্যে কী করতে হবে?” তারা উত্তর দিলেন: “অনুগ্রহ করুন, আপনি যখন সেই গৌরবের আসনে বসবেন, আমরা একজন যেন আপনার ডান পাশে, আর একজন আপনার বাঁ পাশে বসতে পাই।” যীশু তাঁদের বললেন: “তোমরা যে কী চাইছ, তা তোমরা বুঝতে পারছ না । আমি নিজে যে-পাত্র থেকে পান করতে চলেছি, তোমরা কি সেই

 

 

পাত্র থেকে পান করতে পার? যে-দীক্ষাস্নানে আমি দীক্ষিত হতে চলেছি তোমরা কি সেই দীক্ষাস্নানে দীক্ষিত হতে পার?” তাঁরা উত্তর দিলেনঃ “হ্যাঁ, আমরা পারি!” তখন যীশু বললেন: “যে- পাত্র থেকে আমি পান করতে চলেছি, তা থেকে তোমরা অবশ্যই পান করবে; আর যে-দীক্ষাস্নানে আমি দীক্ষিত হতে চলেছি, সেই দীক্ষাস্নানে তোমরা দীক্ষিত হবেই! কিন্তু কাউকে আমার ডান পাশে বা বাঁ পাশে বসতে দেওয়ার অধিকার তো আমার নেই । সেই স্থান দুইটি যে তাদেরই প্রাপ্য, যাদের জন্যে তা নির্দিষ্ট হয়ে আছে ।”

এইসব কথা যখন বাকি দশজন শিষ্যের কানে এলো, তখন যাকোব আর যোহনের ওপর তাঁরা রেগে গেলেন । তাই যীশু তাঁদের কাছে ডেকে বললেন: “তোমরাতো জানোই, বিজাতীয়দের তথাকথিত শাসক যারা, তারা প্রজাদের ওপর প্রভুত্ব করে; তেমনি বিজাতীয়দের মধ্যে বড় যারা, তারাও আবার অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করে । তোমাদের মধ্যে কিন্তু এমনটি যেন না হয় । বরং তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায়, তাকে হতে হবে তোমাদের সেবক; এবং তোমাদের মধ্যে যে প্রধান হতে চায়, তাকে হতে হবে তোমাদের সকলেরই দাস । মানবপুত্র তো সেবা পাবার জন্যে আসেনি । সে এসেছে সেবা করতে এবং বহু মানুষের মুক্তিপণ হিসেবে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে।”

সিস্টার মেরিয়ান টিরিজা হলিক্রস ভগিনী সংঘের একজন সেবিকা । সেবা কাজে নিবেদিত তাঁর জীবন । কর্মজীবনে তিনি ছিলেন হলি ক্রস কলেজের অধ্যক্ষ । এক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ । একটি স্বনামধন্য কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও তাঁর মধ্যে কোন অহংবোধ ছিল না । অমায়িক ছিল তাঁর ব্যবহার। অসম্ভব সুন্দর তাঁর বাচনভঙ্গি । মানুষকে গ্রহণ করার এক সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি, সদাচারী, বিনয়ী । এরকম একটি কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও তিনি চালচলনে অত্যন্ত সাদাসিধে । একজন অধ্যক্ষ হিসেবে এরূপ একটি কলেজের সঠিক তত্ত্বাবধান ও এর উত্তোরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি সাধনে তাঁর দূরদর্শিতার কোন জুড়ি ছিল না । সকল পর্যায়ে সকলের সাথে তিনি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন ।

তাঁর পরিচালনায় সকলেই সন্তুষ্ট ছিল । কারণ তিনি কাউকে অপ্রয়োজনে তিরস্কার করতেন না, কটু কথা বলতেন না বা মনে আঘাত দিতেন না । সদা কর্তব্যপরায়ণ, অসামান্য দক্ষতার অধিকারী, সকলের নিকট অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। তাঁর সুযোগ্য পরিচালনায় হলি ক্রস কলেজ বহুবার দেশে একটি সেরা মহিলা কলেজ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। তাতেও তিনি উচ্ছ্বসিত হননি বা নিজের মধ্যে অতি বেশি আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করেননি । কারণ তিনি এ কথা জানতেন ও মানতেন, তিনি কর্তব্য প্রাপ্ত হয়েছেন তাঁর ভগিনী সংঘের সিদ্ধান্তক্রমে । আর তাই তিনি আজীবন চলেছেন ঈশ্বরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ও তাঁর নির্দেশনায় । এত ক্ষমতাধর একজন অধ্যক্ষ হয়েও তাঁর বিনয় ও কঠোর সাধনা তাঁকে উন্নীত করেছে এমন এক উচ্চতায় যেখানে পৌছানো যে-কোন মানুষের জন্য অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার ।

কর্তৃপক্ষের প্রতি বাধ্যতা

কর্তৃপক্ষের প্রতি বাধ্যতা স্বাধীনতারই অংশ। এই বাধ্যতা আমাদের স্বাধীন সত্তা থেকে আসে ৷ যদি সহজভাবে আমাদের অন্তর থেকে না আসে তবে সেখানে প্রকৃত শান্তি থাকতে পারে না । আমরা স্ব-ইচ্‌ছায় ও মুক্ত অন্তরে আমাদের পরিবারের কর্তা যিনি, তিনি পিতা বা মাতা যে-ই হোন না কেন,

 

 

 

যেন তার বাধ্য থাকি । একইভাবে সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় প্রধানদের প্রতিও আমাদের বাধ্যতা হবে স্বেচ্ছায় ও খোলা মনে । পরিবারে প্রতিজন ব্যক্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী, সমাজে প্ৰতিজন সদস্য, দেশে প্রতিটি নাগরিক যদি এভাবে স্বেচ্ছায় ও খোলা মনে তাদের পরিচালক ও নেতৃবর্গের পরিচালনাধীনে চলে ও বাধ্য থাকে তাহলে সেই পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সকল সদস্যদের পরস্পর পরস্পরের মধ্যে একতা ও শান্তি বিরাজ করবে। নেতৃবর্গ ও কর্তৃপক্ষ সেই প্রতিষ্ঠানকে ও প্রতিষ্ঠানের সকলকে উন্নতি, বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে ।

সমাজের বিভিন্ন স্তরে কেন কর্তৃপক্ষের প্রতি বাধ্য থাকতে হয় এবং তা না হলে কী অসুবিধার সৃষ্টি হয় তা কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে দেখি ।

সবুজ নবম শ্রেণির একজন মেধাবী শিক্ষার্থী । সে নিয়মিত পড়াশুনা করে । শ্রেণিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথামতো কাজ করে সর্বদা মনোযোগেী থাকে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে সে সদা সতর্ক ৷ যথাসময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়, সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশে উপস্থিত থাকে ও নিয়মমাফিক দিন শুরু করে । শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো কাজ করে । যেমন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়া, সকালে সমাবেশে যোগ দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরিধান করে আসা, শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ও অনাকাঙ্ক্ষিত অন্য কোন কিছু না আনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা এ ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার । সে মনে করে

 

 

 

তার সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য এসবের প্রয়োজন প্রচুর । তাই সে সবই করে নিজের সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে । সে কোন উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীর প্ররোচনায় চলে না ও বিশৃঙ্খল জীবনের পথে পা বাড়ায় না ৷ আর তার সুশৃঙ্খল হওয়ার পিছনে যাদের অবদান অত্যন্ত বেশি তারা হলেন তার স্নেহপূর্ণ বাবা-মা ও শিক্ষকমণ্ডলী । বাবা মায়ের আদেশ-নির্দেশ ও উপদেশ এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের শিক্ষা ও পরিচালনাদান, যা কিনা তার জীবনে চমৎকারভাবে কাজে আসে। তার দৃষ্টান্ত সবার কাছে গ্রহণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে ওঠে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও তাকে সুনজরে দেখেন। শিক্ষকগণও তার ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী । আর তার এ রকম বাধ্যতার কারণে সকলেই তাকে স্নেহ করে ও উৎসাহ উদ্দীপনা যোগায়, যা তার সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য তাকে আরও উৎসাহী করে তোলে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাকে বিভিন্ন ছোট ছোট দায়িত্ব দেন এবং সে দায়িত্বগুলো অত্যন্ত বিনয়ের সাথে গ্রহণ ও পালন করে । তার মধ্যে যে সদাচরণ আছে তার প্রতিফলন তার কাজের মধ্যে সুষ্পষ্ট। তাই বিদ্যালয়ে তার বাধ্যতা কর্তৃপক্ষের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। একজন কিশোরের এ রকম আনুগত্য ও বাধ্যতা কর্তৃপক্ষের গর্বের কারণ ।

কাজ: ব্যক্তিগতভাবে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

উপরে সবুজের দৃষ্টান্তটি তোমার কী কী কারণে গ্রহণযোগ্য মনে হয়?

খ. কর্তৃপক্ষের প্রতি তোমার মনোভাব কী?

গ. তুমি কি কখনো কখনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দূরে সরে থাক, তাঁদেরকে ভয় পাও?

ঘ. তাঁদেরকে কেন ভয় পাও?

ঙ. তুমি কি তাঁদের কাছে নিজেকে নিরাপদ বোধ কর?

চ. . কর্তৃপক্ষ যদি তোমাকে বুঝতে পারেন, তিনি যদি দয়ালু ও নিরপেক্ষ হন তখন কর্তৃপক্ষের প্রতি তোমার মনোভাব ও আচরণ কেমন হয় ?

যীশু ও বাধ্যতা

দ্বিতীয় পাঠে আমরা কর্তৃত্ব সম্বন্ধে যীশুর ধারণা ও শিক্ষা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা দেখব বাধ্যতার প্রতি যীশুর মনোভাব কী? যীশুর জন্ম ও বেড়ে ওঠার মাঝে আমারা তাঁর বাধ্যতার বহু দৃষ্টান্ত পেয়ে থাকি । যীশুর জন্মের পর তাঁর মা মারীয়া ও পালক পিতা যোসেফ তাঁকে আদরযত্ন ও স্নেহে বড় করে তোলেন । সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিবিধান মেনেই তাঁর মা-বাবা তাঁকে সম্মুখ জীবনে চলার প্রেরণা দেন । তাই ১২ বছর বয়সে যীশু যেরুসালেম মন্দিরে হারিয়ে গেলে তাঁর মা-বাবা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন । ব্যস্ত হয়ে তাঁর তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেন । তাঁরা এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেই তাঁরা যীশুকে খুঁজে পাবেন। কিন্তু না, তিনি আত্মীয়-স্বজনের মাঝেও ছিলেন না! এ কথা তাঁরা স্বপ্নেও ভাবেননি যে যীশু হারিয়ে যেতে পারেন । তাহলে মা-বাবাকে না জানিয়ে যীশু কোথায় হারিয়ে গেলেন। অবশেষে বিফল মনোরথ হয়ে খুঁজতে খুঁজতে যীশুর মা-বাবা আবার যেরুসালেম মন্দিরে ফিরে যান। আর তাঁরা সেখানে তাঁকে দেখতে পান পণ্ডিতদের মাঝে। সেখানে যীশু পণ্ডিতদের সাথে গভীর তত্ত্বালোচনায় রত ছিলেন ।

 

 

 

বিজ্ঞের মতো পণ্ডিতদের প্রশ্ন করছিলেন। এতে অনেকেই হতবাক হচ্ছিলেন তার প্রজ্ঞা দেখে । যীশুকে মন্দিরে দেখতে পেয়ে তাঁর মা-বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর মা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তিনি তাঁদের সাথে এমন ব্যবহার করলেন এবং তাঁকে জানালেন যে তাঁরা কত উদ্বিগ্ন হয়েই না তাকে খুঁজছিলেন । যীশু তাঁদের উত্তর দিয়েছিলেন: “কেন খুঁজছিলে আমাকে? তোমরা কি জানতে না যে, আমি নিশ্চয়ই আমার পিতার গৃহেই থাকব?” তারপর তিনি মন্দির ছেড়ে মা-বাবার সাথেই চলে গেলেন । আর প্রকাশিত জীবন শুরুর পূর্ব পর্যন্ত মা-বাবার বাধ্য হয়েই রইলেন । ঈশ্বরপুত্র হয়েও জগৎ সংসারে মা-বাবার অনুগত ছিলেন । তাঁর জীবনের উচ্ছল ও উজ্জ্বল দিনগুলো এভাবেই কেটে গেল ।

যীশুর বাধ্যতার দৃষ্টান্ত আমাদের কাছে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় । তিনি সারা জীবন ধরে ‘তাঁর পিতার’ বাধ্য ছিলেন । সাধু যোহনের লেখা মঙ্গলসমাচার থেকে যীশুর নিজের কথায় আমরা পিতার প্রতি তাঁর বাধ্যতার কথা জানতে পারি “যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছা মেনে চলা এবং তাঁর দেওয়া কাজ সম্পন্ন করা, সেই তো আমার খাবার” (যোহন ৪:৩৪)। “আমি নিজে থেকে কিছুই করি না; বরং পিতা আমাকে যা শিখিয়েছেন, আমি ঠিক তা-ই বলে থাকি ।... যে সমস্ত কাজে তিনি প্রীত হন, আমি সর্বদা তা-ই করে থাকি” (যোহন ৮:২৮-২৯)। মৃত্যু পর্যন্ত যীশু তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করে গিয়েছেন । মৃত্যুর আগের রাতে গেৎসিমানি বাগানে যীশু তাঁর আসন্ন ক্রুশ-মৃত্যুর কথা ভেবে দুঃখে কাতর হয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন: “পিতা আমার, যদি সম্ভব হয়, এই পানপাত্রটি আমার কাছ থেকে দূরেই সরে যাক । তবে আমার ইচ্ছা নয়, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক” (মথি ২৬:৩৯-৪২)।

ফিলিপ্পীয়দের কাছে লেখা সাধু পলের পত্র থেকে আমরা জানতে পারি যীশুর বাধ্যতার স্বরূপ কী এবং তা আমাদের কাছ থেকে কী দাবি করে: “তোমাদের মনোভাব তেমনটি হওয়া উচিত, যেমনটি খ্রিষ্ট যীশুর নিজেরই ছিল । তিনি তো স্বরূপে ঈশ্বর হয়েও ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সমতুল্যতাকে আঁকড়ে থাকতে চাইলেন না, বরং নিজেকে তিনি রিক্ত করলেন; দাসের স্বরূপ গ্রহণ করে তিনি মানুষের মতো হয়েই জন্ম নিলেন । আকারে-প্রকারে মানুষের মতো হয়ে তিনি নিজেকে আরও নমিত করলেন । চরম আনুগত্য দেখিয়ে তিনি মৃত্যু, এমনকি ক্রুশেই মৃত্যু মেনে নিলেন । তাই ঈশ্বর তাঁকে সবকিছুর ওপরে উন্নীত করলেন, তাঁকে দিলেন সেই নাম, সকল নামের শ্রেষ্ঠ যে নাম, যেন যীশু নামে নত হয় প্রতিটি জানু--স্বর্গে, মর্ত্যে, পাতালে--প্রতিটি জিহ্বা যেন এই সত্য ঘোষণা করে: যীশু খ্রিষ্ট স্বয়ং প্রভু, আর এতেই যেন প্রকাশিত হয় পিতা ঈশ্বরের মহিমা” (ফিলিপ্পীয় ২: ৫-১১)।

কাজ : বাধ্যতার প্রতি যীশুর মনোভাবের সাথে তোমার মনোভাবের তুলনা কর ।

 

 

অনুশীলনী

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১। স্বাধীনতার সাথে কোন বিষয়টি জড়িত ?

ক. শ্ৰদ্ধা

গ. নম্রতা

খ. ভক্তি

ঘ. বাধ্যতা

২। জেবেদের দুই ছেলে যাকোব ও যোহন যীশুর ডান-বাম পাশে বসতে চেয়েছিল কেন ?

ক. ক্ষমতা পেতে

গ. বিশ্বাসী হয়ে

খ. বাধ্য হয়ে

ঘ. সেবা করতে

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :

চয়ন পিতামাতার খুব প্রিয় সন্তান । ছোটবেলা থেকেই সে পিতামাতার কথামতো চলে । সে প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে, পড়ালেখা করে এবং প্রতিনিয়ত পারিবারিক প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে। এ কারণে অনেক সময় তার পিতামাতা তাকে পরিবারের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিত থাকেন ।

৩। চয়নের মধ্যে কোন বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে ?

ক. কর্তৃত্বের

গ. কর্তৃপক্ষের

খ. বাধ্যতার

ঘ. বন্ধুত্বের

৪। চয়নের এ ধরনের আচরণের কারণে পরিবারে আসতে পারে

i. মনোমালিন্য iii. আনন্দ

ii. সুন্দর সম্পর্ক

নিচের কোনটি সঠিক ?

ক. i ও ii

খ. i ও iii

গ. ii ও iii

ঘ. i, ii ও iii

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায় ?

২. বাধ্যতা ও স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত কেন ?

৩. কর্তৃত্ব কাকে বলে ?

৪. কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুগত থাকা উচিত কেন ?

৫. যীশু খ্রিষ্টের বাধ্যতাকে আমরা অনুসরণ করব কেন ?

 

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. পিতামাতার দুই সন্তান হৃদয় ও উদয় । হৃদয় খুব অধ্যবসায়ী, সে পিতামাতার কথা শোনে, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করে, কারো সাথে সে ঝগড়া বিবাদ করে না । কিন্তু উদয় মেধাবী হলেও সে পিতামাতা বা গুরুজনদের কথা শোনে না, বাজে ছেলেদের সাথে চলাফেরা করে। হৃদয় ও উদয় দুই জনই ঢাকায় থেকে কলেজে পড়তে আগ্রহী । তাদের মা তাদের আগ্রহ জানতে পেরে বললেন, ‘তোমাদের ঢাকায় লেখাপড়া করাতে আমাদেরও ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তাতে তোমাদের ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটবে'। মায়ের কথায় হৃদয় ঢাকায় না গিয়ে গ্রামের এক কলেজে ভর্তি হলো ।

ক. যাকোব ও যোহনের সাথে কারা রেগে গেলেন ?

খ. যে প্রধান হতে চায় তাকে সকলের সেবক হতে হয় কেন ? গ. যীশুর কোন শিক্ষা মনে রেখে হৃদয় গ্রামের কলেজেই মনোযোগের সাথে লেখাপড়া করছে - বর্ণনা কর ।

ঘ. উদয়ের আচরণে কি স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার লক্ষ করা যায় বলে তুমি মনে কর ? তোমার মতামত প্রদান কর ।

২. নবম শ্রেণির ছাত্র পবিত্র খুব নম্র, ভদ্র ও মেধাবী । তার এই গুণ দেখে শ্রেণি শিক্ষক তাকে শ্রেণির ক্যাপ্টেন নির্বাচন করেন । দায়িত্ব পেয়ে পবিত্র শ্রেণির সহপাঠীদের সকল সমস্যা প্রধান শিক্ষককে জানায় এবং সেগুলোর সমাধান করে । কোনো ছাত্র অসুস্থ হলে অন্য ছাত্রদের সাথে নিয়ে তাকে সেবা দেওয়া। শ্রেণিতে কোলাহল ও বিশৃঙ্খলা হলে ছাত্রদের বুঝিয়ে ও অনুরোধ করে শ্রেণিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে । তাদের শ্রেণির এক সহপাঠী প্রীতম তাদের শ্রেণির ক্যাপ্টেন হতে চেয়েছিল কিন্তু সে তা হতে না পেরে পবিত্র যাতে শ্রেণিতে শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে জোরে জোরে চীৎকার করে, অনুমতি না নিয়ে অযথা বাইরে ঘোরাফেরা করে, মিথ্যা কথা বলাসহ আরও নানা ধরনের বিরক্তিকর কাজে সে লিপ্ত ।

ক. বিজাতীয়দের রাজারা নিজেদের প্রজাদের ওপর কী চালায় ?

খ. বড়দের কনিষ্ঠদের মতো হতে হবে কেন ?

গ. পবিত্রের মধ্যে কর্তৃত্বের কোন দিকটি কাজ করেছে – ব্যাখ্যা কর ।

ঘ. কর্তৃপক্ষের প্রতি বাধ্য থাকার জন্য প্রীতমের এমন আচরণ কি যৌক্তিক বলে মনে হয় ? উত্তরের স্বপক্ষে তোমার যুক্তি প্রদান কর ।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion